বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৮ অপরাহ্ন
হারুনার রশীদ বুলবুল, কেশবপুর (যশোর): কেশবপুরে বিএনপি নেতা আবু বকর আবুর ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠান হয়। যশোর জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি,কেশবপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান শহীদ আবুবকর আবু’র ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯ নভেম্বর বিকেলে কেশবপুর উপজেলা বিএনপির আয়োজনে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে ওই স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন আজাদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম-আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সদস্য মিজানুর রহমান, কেশবপুর পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর করির, হুমায়ূন কবির সুমন, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন আলা, যুগ্ম-আহবায়ক মাসুদুজ্জামান মাসুদ, যুগ্ম-আহবায়ক রেজাউল ইসলাম, পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি কুতুবউদ্দিন বিশ্বাস, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান চৌধুরী, মরহুম আবু বকর আবু’র ভাইপো হুমায়ূন কবির। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম শহীদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, মজিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহমান, বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাস্টার কে এম খলিলুর রহমান, সাগরদাঁড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম খান, মঙ্গলকোট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেন, উপজেলা যুবনেতা আলমগীর হোসেন, আব্দুল গফুর, পৌর যুবদলের সদস্য সচিব মেহেদী বিশ্বাস, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শামসুল আলম বুলবুল, সদস্য সচিব বাবুল রানা বাবু, পৌর সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন পলাশ, সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন, উপজেলা কৃষকদলের আহবায়ক নজরুল ইসলাম, সদস্য সচিব কেএম আজিজ, যশোর জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক রাজিদুল ইসলাম সাগর, যশোর জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মেহদি হাসান হিমেল, উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক আজিজুর রহমান আজিজ, সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, পৌর ছাত্রদলের সভাপতি খায়রুল ইসলাম, সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম, কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাহাতুল ইসলাম সুজনসহ উপজেলা ও পৌর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, সেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদলসহ অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের হাজার হাজার নেতাকর্মীবৃন্দ।
স্মরণ সভা শেষে মরহুম আবু বকর আবু’র রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন কেশবপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা খলিলুর রহমান।
উল্লেখ্য, একাদশ সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে মনোনয়নের জন্য ঢাকায় গিয়ে অপহৃত হন বিএনপি নেতা যশোরের কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর আবু। চারদিন পর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার তেলঘাট এলাকার বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর ছয় বছর কেটে গেলেও আবু বকর আবুর স্বজনরা জানতেও পারেননি খুনি কারা?কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবু বকর আবু হত্যার কোনো ক্রু গত ছয় বছরেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। আবু বকর আবুকে রাজধানীতে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হলেও আজও তার কোন কুলকিনারা হয়নি বলে তার পরিবারের অভিযোগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের জন্য ঢাকায় গিয়ে চেয়ারম্যান আবু বকর আবু ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর রাজধানীর পল্টনের মেট্রোপলিটন হোটেল এলাকা থেকে অপহরণ হয়েছিলেন।
অপহরণের চার দিন পর ১৯ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন তেলঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদী থেকে পুলিশ তার লাশটি উদ্ধার করে ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ওই সময় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। পরে অজ্ঞাত নামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা হয়েছিল। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি তদন্তে পিবিআই হত্যার কোন কু উদ্ধার বা আবু বকর আবুর খুনিদের চিহ্নিত করতে না পেরে আদালতে মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছেন বলে মামলার বাদি আবু বকর আবুর ছোট ভাই আবুল কাশেম জানান। এ দিকে ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর গত ২৩ আগষ্ট আবু বকর আবু হত্যার বিচার দাবির জন্য সমন্বয় পরিষদ গঠন করা হয়। ওই সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে আবু বকর আবু হত্যার বিচারের দাবিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর কেশবপুর শহরে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর সুমন গ্রামের কাগজকে জানান, আদালতে পিবিআই’র ফাইনাল রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজি পিটিশন দেওয়া হয়েছে। শহীদ আবু বকর আবুর হত্যাকারীরা চিহ্নিত এবং সঠিক তদন্ত ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আবু বকর আবুর ছোট বোন আঞ্জুমানারা বলেন, ‘আমার ভাই কেশবপুরের বিএনপি নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। একজন পেশাদার রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষের সেবা করতে যেয়ে জীবনে বিয়ে-শাদীও করেননি তিনি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় গত ছয় বছরেও আমার ভাইকে হত্যার কোন ক্রু উদ্ধার হয়নি। এমনকি গত ছয় বছরের মধ্যে এই মামলা সম্পর্কে পুলিশের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ভাইয়ের খুনিদের সম্পর্কে আমাদেরকে কোন তথ্য জানাতে পারেননি।’ তিনি তার ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং খুনীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন। এদিকে চেয়ারম্যান আবু বকর আবুর যষ্ঠ হত্যাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকাল চার কেশবপুর উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে দলের আয়োজনে স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।